ব্রেকিং:
ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ এসিল্যান্ড আঞ্জুমানের বিরুদ্ধে ঈদুল আজহার ছুটিতে শিবগঞ্জে এক সপ্তাহে ৩ খুন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক চাঁপাইনবাবগঞ্জে লাঠিচার্জে ১১ নারী আহতের ঘটনায় ওসি প্রত্যাহার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২.৫ কিলোমিটার সড়কে খোয়া বিছিয়েই লাপাত্তা ঠিকাদার তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮

মঙ্গলবার   ০১ জুলাই ২০২৫   আষাঢ় ১৬ ১৪৩২   ০৫ মুহররম ১৪৪৭

সর্বশেষ:
ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ এসিল্যান্ড আঞ্জুমানের বিরুদ্ধে ঈদুল আজহার ছুটিতে শিবগঞ্জে এক সপ্তাহে ৩ খুন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক চাঁপাইনবাবগঞ্জে লাঠিচার্জে ১১ নারী আহতের ঘটনায় ওসি প্রত্যাহার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২.৫ কিলোমিটার সড়কে খোয়া বিছিয়েই লাপাত্তা ঠিকাদার তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮
১৯

আমের উৎপাদন খরচ উঠছে না চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২৫  

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ঈদের ছুটি ও টানা বৃষ্টির মধ্যে একসঙ্গে বেশির ভাগ আম পেকে যায়। এর ফলে আমের দাম কমে যায়। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উৎপাদন খরচ উঠছে না অনেকের। কানসাট, রহনপুর, ভোলাহাট ও শহরের পুরাতন বাজারে প্রতিদিন আম বেচাকেনা চলছে। তবে জুস কোম্পানি ও রপ্তানিকারকরা আম কিনছেন না। কৃষকরা বলছেন, দাম না বাড়লে লোকসান পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

চাষিরা বলছেন, সার, সেচ, ওষুধ আর শ্রমিকের খরচ বাড়লেও প্রতি মণ আমে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। অনেকেই বলছেন, খরচ উঠছে না, এমনকি গাছ থেকে আম পাড়ার খরচও তুলতে পারছেন না অনেকে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘কোরবানির ঈদের লম্বা ছুটির সময় আম সংগ্রহ ও ভোক্তা কম থাকায় দাম পড়ে গিয়েছিল। এখন আবার পুরোদমে সংগ্রহ শুরু হওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে জাতভেদে দামের পার্থক্য রয়েছে।’

চাষিরা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়ায় এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু ঈদের লম্বা ছুটি ও টানা বৃষ্টির কারণে একসঙ্গে সব জাতের আম পেকে গেছে। এতে বিপুল পরিমাণ আম বাজারে আসায় দাম পড়ে গেছে। সুমন আলী নামে এক আমচাষি বলেন, ‘গত বছর ভালো দাম পেয়েছিলাম, এবার ফলন বেশি হলেও দাম অনেক কম। টানা বৃষ্টিতে আম পচে যাচ্ছে, মোকামে ক্রেতা নেই।’ 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারটি প্রধান আমবাজার। এর মধ্যে শহরের পুরাতন আমবাজার, শিবগঞ্জের কানসাট, গোমস্তাপুরের রহনপুর ও সীমান্তবর্তী ভোলাহাট। এর বাইরেও অর্ধশত ছোট বাজার রয়েছে। সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ত বাজারটি কানসাট। শিবগঞ্জ উপজেলার এ বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে আমের বেচাকেনা। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে সড়কের দুই পাশে সারি সারি আড়ত। এখানে রয়েছে ৩০০টির বেশি আড়ত, যেখান থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাকে দেশের নানা প্রান্তে আম পাঠানো হয়।

কানসাট আম বাজার পরিচালনা কমিটির আলমগীর জুয়েল বলেন, ‘ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাকে আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতিদিন এখানে ১৫ থেকে ১৮ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয়। এবার ঈদের ছুটির কারণে সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেছে। তার ওপর আম বিদেশে রপ্তানি কম হওয়ায় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।’

চাষি আহসান হাবিব বলেন, ‘৩০ বছর ধরে কানসাটে আম বিক্রি করছি। এবার দাম অনেক কম। জুস কোম্পানিগুলোও এবার বাজারে নেই। আড়তে তাদের লোক এলেও তারা অনেক কম দাম বলছে।’

কানসাট ও অন্যান্য বাজারে আমের বর্তমান দর এমন- ল্যাংড়া আম প্রতি মণ ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা, ফজলি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, আম্রপালি ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ৪ হাজার টাকা, লক্ষণভোগ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও খিরসাপাত আম ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। মৌসুম শেষের দিক হওয়ায় দাম বেশি।

জেলা শহরের পুরাতন আম বাজারটিও জমজমাট। মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এ বাজারে সদর উপজেলার গোবরাতলা, মহিপুর, বারোঘরিয়া, কালিনগর, শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর থেকে আম আসে। রহনপুরের বাজার গড়ে উঠেছে মহানন্দা ও পূর্ণভবা নদীপথ ঘিরে। এখানকার আমবাজার বসে রেলস্টেশনের সামনে, যা এখন রীতিমতো রমরমা। সড়কপথ যোগ হওয়ায় বেচাকেনা বেড়েছে অনেক। ভোলাহাট আমবাজারটি বসে ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। এখান থেকেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা আম কিনে নিয়ে যান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, ‘বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ আমই উৎপাদিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। অথচ আমরা এখনো আমকে শিল্পপণ্য হিসেবে নিচ্ছি না। বিশ্বজুড়ে আম এখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য।’ তিনি বলেন, ‘আম প্রক্রিয়াকরণ শুরু হলে এখন যে বাজারমূল্য আমরা বলছি, তা তিন গুণ বেড়ে যাবে। কর্মসংস্থান বাড়বে, জিডিপিতেও এর প্রভাব পড়বে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ টনের মতো। উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে কিছুটা খরা ছিল, পরে বৃষ্টিতে মাটিতে রস তৈরি হওয়ায় আমের গঠন ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৭০ টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। তবে রপ্তানি বাড়াতে আরও উদ্যোগ নিতে হবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
এই বিভাগের আরো খবর