ব্রেকিং:
ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ এসিল্যান্ড আঞ্জুমানের বিরুদ্ধে ঈদুল আজহার ছুটিতে শিবগঞ্জে এক সপ্তাহে ৩ খুন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক চাঁপাইনবাবগঞ্জে লাঠিচার্জে ১১ নারী আহতের ঘটনায় ওসি প্রত্যাহার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২.৫ কিলোমিটার সড়কে খোয়া বিছিয়েই লাপাত্তা ঠিকাদার তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮

বুধবার   ১৫ অক্টোবর ২০২৫   আশ্বিন ২৯ ১৪৩২   ২২ রবিউস সানি ১৪৪৭

সর্বশেষ:
ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ এসিল্যান্ড আঞ্জুমানের বিরুদ্ধে ঈদুল আজহার ছুটিতে শিবগঞ্জে এক সপ্তাহে ৩ খুন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক চাঁপাইনবাবগঞ্জে লাঠিচার্জে ১১ নারী আহতের ঘটনায় ওসি প্রত্যাহার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২.৫ কিলোমিটার সড়কে খোয়া বিছিয়েই লাপাত্তা ঠিকাদার তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮
৩৯৭৬

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাল্যবিবাহ: কিশোরী থাকতেই শিশুর মা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২৫  

  • গত বছর থেকে এ পর্যন্ত ৪১ বাল্যবিবাহ বন্ধ। তবে অন্তত তিন গুণ বিয়ে নিভৃতে সম্পন্ন হয়েছে।
  • ব্র্যাকের জরিপে দেশে বাল্যবিবাহের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, হার ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ।
  • প্রধান কারণ নিরাপত্তাহীনতা। সঙ্গে রয়েছে দারিদ্র্য, ভালো পাত্রের সন্ধান ও শিক্ষাদানে অনীহা।
     

    বয়স কম, স্বপ্নও কাঁচা—তবু গলায় মালা, কপালে সিঁদুর। দারিদ্র্য, অনিরাপত্তা আর সামাজিক চাপে বাল্যবিবাহ যেন থামছেই না। কিশোরী থাকতেই হচ্ছে শিশুর মা। বই-খাতা নয়, কোলে এখন শিশু। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামগঞ্জে এমন দৃশ্য এখনো সাধারণ বিষয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি, প্রশাসনের অভিযান— এত কিছুর পরও অল্প বয়সে মেয়েদের বিবাহের প্রবণতা কমছে না।

    জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিপড়ুয়া অনেক কিশোরীকে জোর করে বা কৌশলে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিবারের ভাষায়, ‘সম্মান রক্ষা’, অল্প বয়সে কন্যার বোঝা কমানো, কিংবা দারিদ্র্য থেকে মুক্তির আশায় এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন অভিভাবকেরা। তবে এর পেছনে রয়েছে সামাজিক অনীহা, দারিদ্র্য, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়া এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা।

    জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, শুধু গত বছরই জেলায় ২০টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় এনজিওগুলোর জরিপে দেখা গেছে, এর অন্তত তিন গুণ বিবাহ নিভৃতে সম্পন্ন হয়েছে, যেগুলো প্রশাসনের চোখে ধরা পড়েনি। তার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে এ হার সবচেয়ে বেশি। তবে নাচোল, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর উপজেলায়ও কম নয়।

     

    শিক্ষা বিভাগের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালে জেলায় এসএসসি পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন করেছে ২০ হাজার ২৭০ জন শিক্ষার্থী। তার মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৭ হাজার ১৫৭ জন। অর্থাৎ ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি—তাদের বেশির ভাগ ছাত্রী, যাদের অনেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে।

    মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৪১টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের ২০২৩ সালের ‘বর্ন টু বি আ ব্রাইড: চাইল্ড ম্যারেজ- ট্রেন্ডস অ্যান্ড কজেস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বাল্যবিবাহের দিক থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দ্বিতীয় স্থানে। এ জেলায় বাল্যবিবাহের হার ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ। প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাকে। সঙ্গে রয়েছে দারিদ্র্য, ‘ভালো পাত্রের সন্ধান’, আর মেয়েদের শিক্ষাদানে অনীহা।

    আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের আগে মেয়েদের ও ২১ বছরের আগে ছেলেদের বিবাহ সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কাবিননামায় বয়স জালিয়াতি করে এই বিবাহ বৈধ করে ফেলার প্রবণতা বেশ সাধারণ। স্থানীয় কাজিরা অর্থের বিনিময়ে এ কাজে সহযোগিতা করেন।

    অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক সময় স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা প্রশাসনকে সহযোগিতা না করে উল্টো চাপ সৃষ্টি করেন। ভোটের রাজনীতি, আত্মীয়তার সম্পর্ক কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় পরিবারগুলোকে উৎসাহিত করেন বাল্যবিবাহে। ফলে প্রশাসনের একার পক্ষে প্রতিরোধ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে অভিযান শেষে গোপনে বিবাহ সম্পন্ন হয়।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা শহরের এক অভিভাবক বলেন, ‘মেয়ের নিরাপত্তার অভাবে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের মতো অভিভাবকেরা একরকম অসহায়।’

    জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পলশা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসলেম উদ্দিন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে জেলায় বাল্যবিবাহ বেশি। অধিকাংশ অভিভাবক তাঁদের কন্যাসন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। স্থানীয় নারী অধিকারকর্মী মোমেনা খাতুন বলেন, ‘শুধু অভিযান চালালে হবে না, পরিবারগুলোকে বিকল্প সমাধান দিতে হবে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হলে বাল্যবিবাহ রোধ করা যাবে না।’

    এ বিষয়ে জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাহিদা আখতার বলেন, ‘বাল্যবিবাহ বন্ধ করা শুধু প্রশাসনের দায়িত্ব নয়; অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি—সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
এই বিভাগের আরো খবর