ব্রেকিং:
ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ এসিল্যান্ড আঞ্জুমানের বিরুদ্ধে ঈদুল আজহার ছুটিতে শিবগঞ্জে এক সপ্তাহে ৩ খুন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক চাঁপাইনবাবগঞ্জে লাঠিচার্জে ১১ নারী আহতের ঘটনায় ওসি প্রত্যাহার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২.৫ কিলোমিটার সড়কে খোয়া বিছিয়েই লাপাত্তা ঠিকাদার তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮

বুধবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩২   ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

সর্বশেষ:
ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ এসিল্যান্ড আঞ্জুমানের বিরুদ্ধে ঈদুল আজহার ছুটিতে শিবগঞ্জে এক সপ্তাহে ৩ খুন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক চাঁপাইনবাবগঞ্জে লাঠিচার্জে ১১ নারী আহতের ঘটনায় ওসি প্রত্যাহার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২.৫ কিলোমিটার সড়কে খোয়া বিছিয়েই লাপাত্তা ঠিকাদার তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮
৫৬৮

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোন্দল-গ্রুপিংয়ে বিএনপিতে অস্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ৯ জুলাই ২০২৫  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপিতে অভ্যান্তরীণ কোন্দল চরমে। জেলা থেকে উপজেলা সবখানেই নেতাকর্মীর মধ্যে বিভক্তি। তৃণমূল পর্যন্ত কোন্দল বিস্তৃতি পেয়েছে। জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সঙ্গে বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক এমপিদের সম্পর্ক ‘সাপে-নেউলে’। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া ও সদস্য সচিব রফিকুল ইসলামও এক টেবিলে বসেন না। দুজনেরই আলাদা বলয় রয়েছে। দলীয় কর্মসূচিও পালন করছেন আলাদা আলাদা ভাবে। সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপুর আলাদা গ্রুপ নেই। এই বিএনপি নেতা কখনো আহ্বায়কের সঙ্গে আবার কখনো সদস্য সচিবের সঙ্গে। গত ৪ বছরেও এ কমিটির তিন নেতাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারেননি। ইউনিট কমিটিগুলোতে চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা।

প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভায় দুটি করে কমিটি। জেলা বিএনপির দ্বায়িত্বশীল নেতাদের বিতর্কিত কর্মকা- নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ট্রল হচ্ছে। এর খেসারত দিচ্ছে পুরো দল। এছাড়াও সবখানে রয়েছে সাবেক এমপিদের আলাদা বলয় আর প্রভাব। দীর্ঘদিনের পুরনো রাজনীতির বলয় ভেঙে দলকে সংগঠিত করতে পারেনি বর্তমান নেতৃত্ব। তবে দলে সৃষ্ট জটিলতা সমাধান ও শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর থেকে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। টানা কয়েকটি জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনীতিতে দলটির শেকড় কতটা গভীরে প্রোথিত তা প্রমাণ করেছে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ফল। বিতর্কিত ওই নির্বাচনে সারাদেশে সাতটি আসনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি আসনে ধানের শীষ জয়লাভ করে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিএনপির সেই ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলের ভেতরে একাধিক গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা এবং কিছু নেতার ‘নিজস্ব বলয়’ গড়ে তোলার প্রবণতা জটিল করে তুলেছে বিএনপির রাজনীতিকে। এই দ্বন্দ্বের প্রভাব আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর গোলাম জাকারিয়াকে আহ্বায়ক ও রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আর সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়কের দায়িত্ব পান অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপু। পরের বছর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেলা বিএনপির ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি হয়। ওই কমিটিতে বাদ পড়েন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বর্ষীয়ান রাজনীতিক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা, মো. হারুনুর রশিদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের অনুসারীরা। সাবেক এমপিদের কোণঠাসা করতে গিয়ে দলকেই বিপদে ফেলেছেন কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতারা। সাংগঠনিক দুর্বলতায় বিএনপির এই ‘দুর্গ’ এখন নড়বড়ে। দলের ভেতরে নানা গ্রুপ সক্রিয়। তখন থেকে এ কমিটি নিয়ে চলছে বিতর্ক। বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা।

বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে সাবেক এমপিদের অনুসারীরা বাদ পড়েন। সেই থেকে হারুনুর রশিদের ঘনিষ্ঠ অনুসারী নেতাকর্মীদের অনেকটাই কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। ফলে নিবেদিত ও ত্যাগী অনেক বিএনপি নেতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পড়েছে হুমকিতে।
অন্যদিকে কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটি যাদের হাতে জেলা বিএনপির দায়িত্ব দিয়েছেন তারা চাইলেই তাদের সঙ্গে রাজনীতি করতে পারতেন। কিন্তু তারা সংগঠন করতে নয়, ‘এমপির লোক’ পরিচয়ে সন্তুষ্ট। এটার জন্য তো কমিটি দায়ি নয়।

দলীয় সূত্র বলছে, শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া ও সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম। সদস্য সচিবের স্বাক্ষর ছাড়ায় শিবগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষনা করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। শুধু শিবগঞ্জ নয়, একইভাব জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের স্বাক্ষর ছাড়াই চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা, নাচোল উপজেলা ও পৌর কমিটি করা হয়। করেন সদস্য সচিবের স্বাক্ষর ছাড়াই। স্থানীয়ভাবে দলে চলমান অসন্তোষের বড় কারণ এটি। কোন উপজেলাতেই বিএনপির ঐক্য নেই। প্রতিটি উপজেলাতেই রয়েছে আলাদা আলাদা বলয় উপ-বলয়। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৪ জুন একইভাবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়ার স্বাক্ষর ছাড়াই জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম চাইনিজ ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা, নাচোল উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের মৌখিক নির্দেশনায় গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এসব কমিটির  বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক এক নেতা বলেন, ৪ বছর আগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সাজানো কমিটিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদের অনুসারীদের রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ হয়। বর্ষীয়ান রাজনীতিক হারুনুর রশিদকে কোণঠাসা করতে গিয়ে পুরো জেলা বিএনপিকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে দলটি। তবে হারুনুর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। ভোটের রাজনীতিতে পরিক্ষীত। বিগত দিনে তিনি এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে হারুনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করছেন।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রর নির্দেশ ছিল তিন জনের যৌথ স্বাক্ষরে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করতে। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া আমার স্বাক্ষর ছাড়াই ৫টি ইউনিট কমিটির অনুমোদন দেন। দলে গ্রুপিং ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বড় কারণ এটি। পরে বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়ে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের দিয়ে কয়েকটি ইউনিট কমিটি করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া বলেন, আমার স্বাক্ষর ছাড়া কমিটির কোন ভিত্তি নেই। ঢাকায় মিটিংয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেছেন আহ্বায়কের স্বাক্ষর ছাড়া কোন কমিটি হয়না। তারপরও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক আব্দুস সালামের নাম ব্যবহার করে তারা কয়েকটি ইউনিট কমিটি করে করেছেন। এসব কমিটি বৈধ বলার সুযোগ নেই। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রশ্নে এই বিএনপি নেতা বলেনÑ আগামী নির্বাচনে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে; এবং সমাধানও সম্ভব। কিন্তু সাবেক এমপি হারুনুর রশীদের সঙ্গে কম্প্রমাইজ কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্ভব নয়। এটা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
এই বিভাগের আরো খবর