শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৩ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশিত: ৩ জুলাই ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা ও পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, ১৪ লক্ষ টাকা নিয়ে একজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন বিদ্যালয়টির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। আর এভাবেই নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে রাধানগর ইউনিয়নের কায়েমপুর গ্রামের মৃত মো. আব্দুস সামাদের ছেলে মো. শরিফুল ইসলামের বলেও জানা গেছে। পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারের আগে একটি পদের বিপরীতে ২৭ জন প্রার্থী আবেদন করলেও, পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ৮ জন। পরীক্ষার আগেই অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের বিষয়টি প্রচার হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষায় অনেকেই অংশ নেয়নি বলেও জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, গত ২২ জুন ১৪ লক্ষ টাকার চুক্তিতে শরিফুল ইসলামকে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম সজিব ও প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সেলিম ইতোমধ্যে শরিফুলের কাছে ১১ লক্ষ টাকাগুনে নিয়েছেন। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পাওয়া ১১ লক্ষ টাকার ৫ লক্ষ স্কুল ফান্ড ও নিয়োগ পরীক্ষার দিনে আপ্যায়নসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ধরা হয়েছে ২ লক্ষ টাকা। বাকি ৪ লক্ষ টাকা নিয়েছেন সভাপতি মনিরুল ইসলাম সজিব। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈধতা নিয়েও। কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর ছাত্র সজিবের মা ফুলবতী খালকে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। অথচ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, বাবা বেঁচে থাকলে মা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হতে পারবে না। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ফুলবতী খালকে’র স্বামী মংলু কান্ত জীবিত আছেন। মংলু কান্তের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। আবেদন করেও পরীক্ষায় অংশ নেননি স্থানীয় যুবক ইউনুস আলী। তিনি বলেন, আমরা মোট ২৭ জন আবেদন করেছিলাম। কিন্তু মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শরিফুলকে নিয়োগ চূড়ান্ত করার বিষয়টি আগেই জানতে পেরে যায় অনেকেই। তাই আমার মতো অনেকেই অযথা আর পরীক্ষা দিতে আসেনি। কারন নিয়োগ আগেই হয়ে থাকলে পরীক্ষা দিয়ে লাভ কি? নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া একজন বলেন, আমরা ৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার আসার আগেই জেনেছিলাম, টাকা নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়ে গেছে। তাও পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম, যদি হয়ে যায়। পরীক্ষাও ভালো দিয়েছিলাম, তবে জানতাম শরিফুলেরই নিয়োগ হবে। ক্ষদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (আদিবাসী) এক আবেদনকারী যুবক জানায়, যখন টাকা নিয়ে নিয়োগ দেয়ার কথা শুনলাম, তখন আমিও সভাপতির কাছে গেলাম। ৩ লক্ষ টাকাও দিতে চেয়েছি। কিন্তু সরাসরি না করে দিয়েছে। অথচ কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই আদিবাসী। তাই আমার মতো মানুষ নিয়োগে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অর্থের কাছে সব হেরে গেছে। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পাওয়া শরিফুল ইসলাম অর্থ লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কতো টাকা দিয়ে নিয়োগ হয়েছে সেটা বলবো না। যারা টাকা নিয়েছে, তারা যতো টাকার কথা বলবে, আমি ততো টাকাই দিয়েছি। সেটা ১০ লাখ, ১১ লাখ, ১২ লাখ যেকোন পরিমাণ অর্থ হতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য মুঠোফোনে জানান, কমিটিকে ছাড়াই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মোট ১৪ লক্ষ টাকার চুক্তি করেছে। ইতোমধ্যে ১১ লক্ষ টাকা নিয়েছে শরিফুলের কাছ থেকে। স্কুলের ফান্ডে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিজেদের কাছেই রেখেছে তারা। কমিটির আরেক সদস্য জাব্বার সরদার বলেন, দাতা হিসেবে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে থাকলেও আমরা তেমন কিছু জানতেই পারি না। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মনমতো বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আমাদেরকে এসব বিষয়ে জানানোরও প্রয়োজন মনে করে না তারা। সম্প্রতি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদের নিয়োগের বিষয়েও আমি তেমন কিছু জানি না। এবিষয়ে কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সেলিম বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে সঠিক ও বৈধ উপায়ে সম্পন্ন হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম বা আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটেনি। তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি আমার কানেও এসেছে। কিন্তু আমি এর সাথে কোনভাবেই জড়িত নয়। প্রতিষ্ঠাতানের অন্য কেউ এর সাথে জড়িত থাকলে সে দায় সম্পূর্ণ তার। গত সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে এবিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুল ইসলাম সজিবের বক্তব্য নিতে তার বাসায় গেলে তিনি বলেন, বাসায় নয় স্কুলে কথা বলবো। এরপর স্কুলে গিয়ে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি কোন ভিডিও বক্তব্য বা মন্তব্য করবো না। এরমধ্যেই প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কল আসে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার। মুঠোফোনে তিনি বলেন, তিনি (বিদালয় সভাপতি) আমার মামা হয়। তাই সম্মানহানি হয় এমন কিছু না করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
গোমস্তাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম জানান, এখন নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে গেছে। নিয়োগের আগে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে পারলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হতো।
chapainawabgonj.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়