শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৫ ১৪৩১ ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মর্দনা-বিরামপুর। সকালে গ্রামের রাস্তায় নারীরা ব্যস্ত পাটের আঁশ ছড়ানোর কাজে। তাদের সঙ্গেই কাজ করছিলেন এক নারী। তাকেই আবার দেখা গেল ছড়ানো পাটের আঁশ বিলের পানিতে ধুয়ে একসঙ্গে করে রাখতে। বলা যায়, একহাতেই যেন সব কাজ সামলাচ্ছেন তিনি।
কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করতে জানালেন, তিনি সেরিনা বেগম। অন্য সব নারীরা যেখানে অন্যের জমির পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছিলেন, সেরিনা সেখানে নিজের জমির পাটের আঁশই ছাড়াচ্ছিলেন নিজ হাতে। তিনি আরও জানালেন, পাটের জমিতে বীজ দেয়া থেকে শুরু করে আবাদ, আঁশ ছাড়ানো সবই তিনি নিজ হাতেই করেন। নিজেই পাট বিক্রি করতে চলে যান হাটে।
সেরিনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় বেশ কিছুক্ষণ। জানালেন, একবিঘা জমি আধি ভাগে (ফসলের অর্ধেক জমির মালিকের) নিয়ে এবার পাটের আবাদ করেছেন। জমি চাষ দেয়া, বীজ বোনাসহ বিভিন্ন কাজ নিজেই করেছেন, কিছু শ্রমিকও নিয়েছিলেন সহায়তার জন্য। সার-বীজ কেনাসহ সব মিলিয়ে তার এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে সাত হাজার টাকার মতো। সেরিনা আশাবাদী, জমিতে এবার ১২ মণ পাট হবে। তাতে কিছু লাভ থাকবে তার।
সেরিনা বলেন, ‘আমি নিজেই পাটচাষ করেছি প্যাট-মানুষ (শ্রমিক) লিয়্যা। খরচ হয়্যাছে সাত-সাড়ে সাত হাজার। আর নিজে খ্যাটাছি। এখন আশা করছি ১০-১২ মণ পাট যদি হয়, আর যদি ২৫০০ টাকা দাম প্যায়, তাইলে কিছু লাভ হবে।’ আধি ভাগের চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদিত পাটের অর্ধেক পাবেন জমির মালিক, বাকি অর্ধেকটা তার।
নিজেই কেন পাটচাষ করতে গেলেন- এমন প্রশ্নে সেরিনা জানান, ‘পাটে লাভ ভালো। তাই জমি বর্গা নিয়ে পাটচাষ করেছেন। এখন উৎপাদিত পাট বিক্রি করলে যা লাভ হবে, তা দিয়েই চলতে চান। সেরিনার কথায়, ‘বসে থাকলে তো কেউ খ্যাতে (খেতে) দিবে না। কর্মকরায় খ্যাতে হবে (কাজ করে খেতে হবে)। তাই জমি বর্গা লিয়্যাই কৃষিকাজ করছি।’
পাশেই ছিলেন সেরিনার মা বিবিজান বেগম। তিনি জানালেন, ‘সেরিনার স্বামী কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। এরপর থেকে সংসারের বোঝা পুরোটাই সেরিনার ওপর। তার চার মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকেন সেরিনা।’
স্থানীয়রা বলছেন, ‘কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও বেশিরভাগ নারীই কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে সেরিনা বেগম একটু ব্যতিক্রম। তিনি নিজেই জমি বর্গা নিয়ে পাটের আবাদ করেছেন। চাষাবাদ থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রির সব ধাপই তিনি নিজে যুক্ত থেকে সম্পন্ন করেন। তার দেখাদেখি অন্য নারীরা এভাবে চাষাবাদে সরাসরি সম্পৃক্ত হলে আর্থসামাজিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তারা।
chapainawabgonj.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়