শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৬ ১৪৩১ ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
গ্রামের পাঁকা রাস্তা ঘিষে দ্বিতল মাটির বাড়ি। বাড়িতে খাড়া টিনের ছাওনি। বাড়ির বউদের হাতের তুলিতেই রাঙা হয়ে আছে বাইরের দেয়াল। এখানেই শেষ কথা নয়, বাড়ির ভেতরে গিয়ে মনে হবে এই যেন ছোট তাজমহল। নিচে তিন উপরে তিন কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটির মুল ঘরে প্রবেশ করার আগেই রয়েছে ৬টি তাজমহলের মত ডিজাইন করা দরজা। প্রতিটি দরজার মধ্যে রয়েছে হাতে আঁকা হরেক রকম ডিজাইনের নকশা।
গতকাল রোববার মাটির বাড়ির এমর দৃশ্য দেখা মিললো বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের কুসমা ডাঙ্গা গ্রামের গনেশ সরেনের বাড়ির।
শুধু গনেশ সরেনের মাটির বাড়ির এমন দৃশ্য তা নয়, বরেন্দ্র অঞ্চলের আদিবাসি পল্লীগুলোর প্রায় মাটির বাড়িতে রয়েছে নানা ধরনের হাতের তুলিতে আঁকা রঙিন আলপনা। ইট-পাথর, সিমেন্টের পলেস্তারা নয়, কাদামাটির দেয়ালেরই এমন শোভা। কোনো শিল্পীর আঁকা নয়, বাড়ির বউদের হাতের তুলিতেই এমন রাঙা হয়ে উঠেছে মাটির দেয়াল। এই দেয়ালঘেরা বাড়ির দিকে তাকালেই মনে হয়, একটু বসে যাই।
ইলা মিত্রের স্মৃতিধন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে মাটির ঘরের এই দৃশ্য পুরো এলাকারই সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ঘর হবে মাটির আর দেয়ালে থাকবে না হাতে আঁকা আলপনা, এ যেন কল্পনাও করতে পারে না এই অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো। দারিদ্র্যকেও যেন জয় করেছে এই দেয়ালশিল্প।
কারণ, একটি হতদরিদ্র পরিবার, অন্ন জোগাড় ছাড়া অন্য চিন্তা মাথায় আসার কথা নয় যাঁদের, তাঁদের ঘরও শোভা পাচ্ছে এমন অপরূপ আলপনায়। বরেন্দ্র অঞ্চলের আদিবাসি ও হিন্দু সম্প্রদায় গ্রামগুলোতে গেলেই বাইরে থেকেই বাড়ির দেয়ালগুলো পথচারীর নজর কাড়ে। সব দেয়ালেই রয়েছে রঙের আলপনা। বাইরে থেকে কোনো শিল্পী এনে এই আলপনা করা হয়নি। তাদের ঘরে ঘরেই রয়েছে এই আলপনাশিল্পী। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি এসে সব মেয়েরা আলপনাশিল্পী হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ মাকে দেখে শিখেছেন। আবার কেউ শ্বশুরবাড়ি এসে দেয়াল রাঙানোকে গেরস্থালির অংশ হিসেবে নিয়েছেন।
বরেন্দ্র অঞ্চলের নঁওগা জেলার নিয়ামতপুর পোরশা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল রহণপুর ও রাজশাহী জেলার তানোর-গোদাগাড়ী উপজেলায় আদিবাসি পল্লীগুলোতে এমন দৃশ্যের মাটির বাড়ি বেশি চোখে পড়ে। এসব গ্রামের একাধিক গ্রামের যুবক-যুবতিরা বলেন, এটা আমাদের ঐতিহ্য। এমন রঙিন আলপনা ছাড়া কোন বাড়ির মানাই না।
সম্প্রতি নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের কুসমা ডাঙ্গা গ্রামে গনেশ সরেনের বাড়িতে গিয়ে কথা হলে বলেন, তার জমি জায়গা নাই বললেই চলে। তবুও মাটির বাড়িটির করেছেন সখের বসে। নিজের চিন্তাই ডিজাইন ও হাতে নকশা করেছেন তিনি। বাড়িটি বয়স ১৫ বছর হবে। বাড়িতে যেই আসুক না কেন একটু সবার নজর কাড়ে বনে যাই।
chapainawabgonj.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়