শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৫ ১৪৩১ ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২১
জোট সরকারের ৫ বছরে পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে একটি দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর। নতুন ১৩ হাজার ৪৯টি পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দিয়েছিলেন দলীয় লোকজন। শুধু মাঠ পর্যায়ে নয়, পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল পুলিশের শীর্ষ পর্যায়েও। এর মধ্যে অতিরিক্ত আইজি, যুগ্ম কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় প্রায় ৩শ’ পদ সৃষ্টি করা হয়। এসব পদে এখনও তার নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা বহাল আছেন। এছাড়া শূন্য পদে নিয়োগ করেছিলেন আরও সাড়ে ১৩ হাজার দলীয় লোক। এসব নিয়োগের মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার আমলে সবচেয়ে আলোচিত ছিল এসআই পদে নিয়োগ বাণিজ্য। অভিযোগ আছে সরকারের একেবারে শেষ সময়ে এসআই নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্য ছিল একেবারে ‘ওপেন সিক্রেট’।
হাওয়া ভবনকে ‘ম্যানেজ’ করে শত-কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ২০০৪ সালে ১ হাজার ৪শ’ এসআই (সাব-ইন্সপেক্টর) পদের জন্য দরখাস্ত আহবান করা হয়। ঔই বছর নভেম্বর মাসে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৩ হাজার প্রার্থী। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় পাস করে মাত্র ৩শ’ জন। এদিকে ২০ মার্ক গ্রেস দিয়ে পাস করানো হয় ১ হাজার ১ জনকে। এদের মধ্যে নিয়োগ দেয়া হয় ৮৩০ জনকে। গত বছর এপ্রিল মাসে তারা যোগদান করেন। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল নয়তো শিবির কর্মী। অভিযোগ আছে এর পরও এদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২ থেকে ৫ লাখ টাকা উৎকোচ নেয়া হয়।এ নিয়ে হৈ-চৈ শুরু হলে তাদের ট্রেনিং পিরিয়ড কমিয়ে ১ বছর থেকে ৬ মাস করা হয়। সরকারের একেবারে শেষ সময়ে তাদের নিয়োগ স্থায়ী করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর। সর্বশেষ এ নিয়োগ দলীয়করণ এবং স্বজনপ্রীতিতে ছিল ভরপুর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো বলেছে, তার জেলা নেত্রকোনা থেকে নিয়োগ দেয়া হয় ৩৪ জনকে এর ১৭ জনই তার নিজ উপজেলার। ময়মনসিংহের ১২টি উপজেলার সর্বোচ্চ নিয়োগ দেয়া হয় ২১০ জনকে। বগুড়ায় নিয়োগ পাওয়া ৩১ জনের মধ্যে ১০ জনই সরাসরি ছাত্রদলের নেতা। ঝিনাইদহ জেলার নিয়োগ পাওয়া ১১ জনের ৯ জন ছাত্রদল এবং ২ জন শিবির কর্মী। কিশোরগঞ্জে নিয়োগ পাওয়া ১৯ জনের ৫ জনই সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের আত্মীয়। কুষ্টিয়ায় নিয়োগ পাওয়া ১১ জনের মধ্যে ৮ জনই ছাত্রদল নেতাকর্মী। নিয়োগ পেয়েছেন খোকসা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলীমুল ইসলামের ছোট ভাই ছাত্রদল নেতা আমির আব্বাস, ছাত্রদল নেতা রফিকুজ্জামান, কুষ্টিয়া শহর বিএনপির হাফিজুর রহমান হেলারের ভাগ্নে জিয়াউল হক তারেক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল কর্মী মনিরুজ্জামান, দৌলতপুর উপজেলা ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম। যশোর জেলায় নিয়োগ দেয়া হয় ১৮ জনকে এরা সবাই ছাত্রদল ও শিবির কর্মী। রংপুরে ১৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হয় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিব-উন-নবী সোহেলের সুপারিশে। এর মধ্যে ১১ জনই ছাত্রদল ও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় নিয়োগ দেয়া হয় ছাত্রদল ও শিবিরের ৩২ নেতাকর্মীকে। এছাড়া সিলেট, পাবনা, বরগুনা, জয়পুরহাট, বরিশাল, পিরোজপুর, মাদারীপুর, মাগুরা, শেরপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১৪৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের বেশীর ভাগই স্থানীয় সংসদ সদস্য নয়তো বিএনপি নেতার সুপারিশে।
দৈনিক যুগান্তর, শনিবার ২০ জানুয়ারি ২০০৭
chapainawabgonj.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়