শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৭ ১৪৩১ ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২২
প্রতিবন্ধী অর্থ যে কোনো কারণে ঘটিত দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ীভাবে কোনো ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিগত, বিকাশগত বা ইন্দ্রিয়গত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। যে ব্যক্তি এ ধরনের শারীরিক বা মানসিক সমস্যায় রয়েছেন, তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবেশগত বাধার কারণে তারা সমাজে পূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহণে বাধাপ্রাপ্ত হন। আমাদের সমাজে যেমন স্বাভাবিক মানুষের বসবাসের অধিকার রয়েছে, তেমনি প্রতিবন্ধীদেরও স্বাভাবিকভাবে বসবাসের অধিকার রয়েছে। আর সে অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের অবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও আইনের পাশাপাশি তাদের বিষয়ে সচেতনতা ও সহমর্মিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি প্রতিবন্ধী রয়েছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন ২৬ হাজারের মতো। রাজশাহীর কাঁকনহাটের ১১ বছর বয়সী রাফিয়া। সে আর পাঁচটা শিশুর মতো বয়সের তুলনায় মানসিক দিক দিয়ে কম বিকশিত ও সমস্যাগ্রস্ত। রাফিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের অ্যাঞ্জেল’স গার্ডেনে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার বাবা-মা তাকে ফেলে চলে যায়। তার বর্তমান ঠিকানা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণগোবিন্দপুরে। সেখানে আশ্রয় মিলে এক পরিবারে। তারপর ওই পরিবারেই বেড়ে ওঠা ও লেখাপড়া শুরু। অনেক চেষ্টার পর সে এখন নিজের সম্পর্কে বলতে পারে। রাফিয়ার সাথে কথা হলে সে জানায়, “আমার দেশের বাড়ি কাঁকনহাট। আমার পড়তে ভালো লাগে। ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি। মামা-মামি আমাকে লেখাপড়া শেখায়। আমরা ছুটিতে ঘুরতে যাই।” প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের মতো রাষ্ট্র ও সমাজের সকল অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের কেন আমরা করুণার চোখে দেখব? আর সেগুলো নিশ্চিত কারার দায়িত্বও আমাদেরÑ কথাগুলো বলছিলেন সদর উপজেলার কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও রাফিয়ার মামা আমিনুল ইসলাম। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার একমাত্র সন্তান প্রতিবন্ধী। আমি তাকে হেয় করিনি। আমরা দ্বিতীয় সন্তানও নেয়নি তার কথা ভেবে। তাকে পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করেছি। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি এবং পাঁচটি মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করি। এই কারণে আমার ছেলে আজ এক সন্তানের বাবা। আমিনুল ইসলাম আরো বলেন, সারা বিশ্বে ১০% মানুষ আজকে প্রতিবন্ধী। যে কোনো কারণেই হোক তারা প্রতিবন্ধী। তাদেরও বাঁচার মৌলিক অধিকার রয়েছে। এই প্রতিবন্ধীদের আমরা করুণা অবহেলা করি। কিন্তু তাদের যে অধিকার আছে, এই আধিকার নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মাসিক ৭৫০ টাকা মোবাইলের মাধ্যমে ভাতা পাচ্ছেন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০ লাখ ৮ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা হিসেবে ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় সারাদেশে বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে ৭৫০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১ হাজার ৩০০ টাকা প্রদান করা হচ্ছে। সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট ভাতার ও শিক্ষা কার্যকম চালু করেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তালিকাভুক্ত ২৬ হাজার ৬৫২ জন প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা পাচ্ছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এই সেবা ও সহায়তা দেয়া হয় বলে জানান জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে কুলসুম। তিনি বলেন, একটা শিশুর অক্ষমতা পুরো পরিবারকে প্রভাবিত করে। পরিবারের অভিভাবক যারা তাদের কর্মক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জে সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম আছে। এছাড়া প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বাকপ্রতিবন্ধী এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুল আছে। সেখানে বাকপ্রতিবন্ধী এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা বা সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের মাধ্যমে প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করা হয়। তারপরই আমরা তাদের প্রতিবন্ধিতার মাত্রা অনুযায়ী সহায়তা দিয়ে থাকি। মা-বাবা ফেলে গেছেনÑ এ ঘটনা যেন আর কোনো রাফিয়ার সাথে না হয়। প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিৎ তাদের সন্তানের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করা। আর আইন কখনোই কোনো অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে না। প্রতিবন্ধী শিশুদের বিকাশের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে, যেখানে ওই শিশুরা তাদের প্রতিবন্ধিতাকে জয় করার সুযোগ পাবে।
chapainawabgonj.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়