বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১২ ১৪৩১ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২২
সেন্টু বয়স ৭৫ বছর। বৃদ্ধ বয়সে জীবন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবারের সদস্য ৪জন। স্ত্রীসহ এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে তাঁর কাছে থাকেন না। অন্য স্থানে বাস করছেন। তালাকের পর মেয়ে চার বছর হতে তাঁর কাছে রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। শত কষ্টের মধ্যে বেঁচে আছেন কাজকর্মের মধ্যে। কিন্তু এ বয়সে বাধা হতে শুরু করছে পায়ের ব্যথা ও অসুখ। ৪০ বছরে হতে আম মৌসুমে আড়তে থেকে ডালি বা ক্যারেটে আম ভর্তি করে ট্র্রাকে তুলে দেওয়া তাঁর কাজ।
জানা গেছে, বৃদ্ধ বয়সে বাস করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর এলাকার রহনপুর আহম্মদী বেগম (এবি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে পূণর্ভবা নদীর পাড়ে। নেই কোন জায়গা জমি। নদীর ধারে ১৪ বছর আগে ছোট্ট একটি ঘর তুলে বসবাস করছেন। জন্মসূত্রে তিনি উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের আলিনগর গ্রামে বেড়ে উঠেছেন।
পরে রহনপুর ইউনিয়নের হঠাৎপাড়ায় বসতভিটা তৈরি করে থাকতেন। কিন্তু বাবার কারণের সেটাও চলে যায়। পরে স্টেশন বাজারে কাজ করার সূত্রে রহনপুর এবি স্কুলের পিছনের নদীরধারে ফাঁকা স্থানে ঘর তুলে বাস করছেন। আম মৌসুম বাদে তিনি মাছ আড়তে বা দৈনন্দিন যে কোন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বৃদ্ধ বয়সে এসেও তিনি কাজকর্ম করে যা রোজগার করেন তা দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
বৃদ্ধ শ্রমিক সেন্টু বলেন, তাঁর কোন আক্ষেপ নেই। যতদিন বেঁচে আছেন কর্ম করে থাকতে চান। তিনি বলেন ৪০ বছরের অধিক সময় হতে আম বাজারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া আম মৌসুম বাদে তিনি মাছের আড়তে কাজ করে থাকেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আম আড়তে কাজ করতে হয় তাঁকে। ক্যারেটে আম সাজিয়ে গাড়ী পর্যন্ত উঠিয়ে দিলে তিনি ক্যারেট প্রতি ১৮টাকা করে পেয়ে থাকেন।
এছাড়া অনলাইন বা খুচরা ব্যবসায়ীদের একটা ক্যারেট প্যাকেট করে দিলে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পেয়ে থাকেন। কাজের উপর নির্ভর করে প্রতিদিন পাঁচশ থেকে আটশ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন বলে তিনি জানান। তবে বৃদ্ধ বয়সে দুই পায়ের হাটুর ব্যথা তাঁকে পীড়া দিচ্ছে। সপ্তাহে তাঁকে ওষুধের খরচ সাতশ থেকে আটশ টাকা লাগে। এখন পরিবারের খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এ বৃদ্ধ বয়সে ইচ্ছে তাঁর নিজের একটা দোকান করা। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারের কারণে করতে পারছেন না। তবে তিনি সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন।
প্রতিবেশী ভুটু জানান, তিনি অত্যান্ত সরল প্রকৃতির লোক। তিনি সারাবছর দৈনন্দিন কাজ করে পরিবারের সংসার চালান। কষ্ট হলেও কারো কাজে হাত পাতেন না। তাঁর একটা স্থায়ী আয়ের উৎসের প্রয়োজন রয়েছে। কুষ্টিয়ার আম ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রায় দুইদশক হতে রহনপুর আমবাজার আম কিনে থাকেন। তখন থেকে সেন্টু ভাইকে চিনি। পরিশ্রমি ব্যক্তি। কাজের প্রতি তাঁর কোন অবহেলা নেই।
আম আড়তদার ইলিয়াস জানান, তাঁর আড়তে ২০ বছরের অধিক সময় হতে কাজ করছেন। তিনি এ পেশায় ৪০ বছর অতিবাহিত করেছেন। বৃদ্ধ বয়সেও কাজের প্রতি কোন অনীহা নেই। অন্যান্য শ্রমিকের মত কাজ করে থাকে। তবে নিজের দুঃখ কখনও তিনি প্রকাশ করতে দেখিনি।
ওই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মোসা. সেফালী বেগম বলেন, বৃদ্ধ বয়সেও কাজ করে সংসার চালান তিনি। তাঁর নামে বয়স্ক ভাতা কার্ড রয়েছে। করোনাকালীন তাঁকে সহায়তা করা হয়েছে।
chapainawabgonj.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়