শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ চৈত্র ১৪ ১৪৩০ ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০১৯
সাত-আট দশক আগে সাধারণ রোগজীবাণুর সংক্রমণেও অনেক মানুষ অসহায়ভাবে মারা যেত। কারণ তখন এত অ্যান্টিবায়োটিক বা জীবাণুনাশক ওষুধ ছিল না। এখন প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ থাকা সত্ত্বেও সাধারণ রোগজীবাণুতে বহু মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ বেশির ভাগ জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে গেছে। অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও এখন লাভ হয় না, জীবাণু মরে না। এমনটি হয়েছে মূলত অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে। অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, দু-এক দিন খেয়ে একটু ভালো লাগলে আর ওষুধ না খাওয়া এবং এমনি আরো কিছু কারণে জীবাণুরা ক্রমেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এখনো এই প্রবণতা রোধ করা না গেলে আমরা ক্রমেই এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগিয়ে যাব। সাত-আট দশক আগের মতো আবারও সাধারণ রোগজীবাণুতে অসংখ্য মানুষ মারা যাবে।
এমনিতেই দেশের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ভালো নয়। নকল ওষুধ, ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব। চিকিত্সা সহজলভ্য নয়, মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। তার ওপর অ্যান্টিবায়োটিক যদি সম্পূর্ণরূপে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে, তাহলে কী হবে? জীবাণুর তো কোনো অভাব নেই। বিশুদ্ধ বলে সরবরাহ করা জারের পানিতেও ব্যাকটেরিয়া থাকে প্রচুর পরিমাণে। ওয়াসার সরবরাহ করা পানির তো কথাই নেই। এসব জীবাণুর আক্রমণ মানুষ রুখবে কিভাবে? অথচ এখনো অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগই নেই। পৃথিবীর কোথাও প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কেনা যায় না। আমাদের দেশে ওষুধের দোকানে যে কেউ চাইলেই অ্যান্টিবায়োটিক পেয়ে যায়। কোনো কার্যকারিতা না থাকলেও অনেকে ভাইরাস বা সর্দিজ্বরেও দোকান থেকে কয়েকটা অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট কিনে খেয়ে নেয়। অনেক ডাক্তার সাহেবও চোখ বন্ধ করে হাই ডোজ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেন। শুধু তা-ই নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলেও যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে। এসব প্রাণীর মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরেও চলে আসছে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব। রোগজীবাণু গড়ে তুলছে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধক্ষমতা।
কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের নির্দিষ্ট কোর্স সম্পন্ন না করলে জীবাণু ধ্বংস হয় না, বরং সেই ওষুধের বিরুদ্ধে জীবাণুটি প্রতিরোধক্ষমতা অর্জন করে। দ্বিতীয়বার একই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সেই জীবাণু ধ্বংস করা যায় না। এভাবেই আজকের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে। বোতল বা প্যাকেটে এমনভাবে অ্যান্টিবায়োটিক বাজারজাত করতে হবে, কেউ যাতে সম্পূর্ণ কোর্সের অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে বাধ্য হয়। কোনো দোকানে প্যাকেট খুলে খুচরা বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর, চিকিৎসক ও ভোক্তাসংগঠনগুলো মিলে এ ব্যাপারে জাতীয় করণীয় নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি ওষুধের বাজার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং অ্যান্টিবায়োটিক অপব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
chapainawabgonj.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়